একশ বছর মৃত থাকার পর উযাইর (আঃ) এর পুনরায় জীবিত হওয়ার ইতিহাস। edit

হযরত দাঊদ ও ইয়াহইয়া (আঃ) এর মধ্যবর্তী সময়ে আগমনকারী ব্যক্তিদের মধ্যে উযাইর (আঃ) ছিলেন অন্যতম। উযাইর (আঃ) কি নবী ছিলেন নাকি নবী ছিলেন না তা নিয়ে মতভেদ রয়েছে। অনেকে বলেন, তিনি বনী ইসরাঈলের নবীগণের মধ্যে অন্যতম একজন নবী ছিলেন। অনেকে আবার বলেন, তিনি নবী ছিলেন না বরং একজন জ্ঞানী ও পুণ্যবান লোক ছিলেন।

একদা তিনি তাঁর ক্ষেত-খামার ও বাগ-বাগিচা দেখার জন্যে ঘর থেকে বের হন। সেখান থেকে প্রত্যাবর্তনকালে দ্বিপ্রহরের সময় একটা বিধ্বস্ত বাড়িতে বিশ্রাম নেন। তাঁর বাহন গাধার পিঠ থেকে নিচে অবতরণ করেন। তাঁর সাথে একটি ঝুড়িতে ছিল ডুমুর এবং অন্য একটি ঝুড়িতে ছিল আঙ্গুর। খাওয়ার উদ্দেশ্যে তিনি একটি পেয়ালায় আঙ্গুর নিংড়িয়ে রস বের করেন এবং শুকনো রুটি তাতে ভিজিয়ে রাখেন। রুটি উক্ত রসে ভালরূপে ভিজে গেলে খাবেন, এই সময়ের মধ্যে বিশ্রামের উদ্দেশ্যে চিত হয়ে শুয়ে পড়েন। এ অবস্থায় তিনি বিধ্বস্ত ঘরগুলোর প্রতি লক্ষ্য করলেন, যার অধিবাসীরাও ধ্বংস হয়ে গিয়েছে। তিনি অনেকগুলো পুরাতন হাড় দেখতে পেয়ে মনে মনে ভাবলেন, মৃত্যুর পর আল্লাহ কিরূপে এগুলোকে জীবিত করবেন? আল্লাহ যে জীবিত করবেন, এতে তার আদৌ কোন সন্দেহ ছিল না। এ কথাটি তিনি কেবল অবাক বিস্ময়ের সাথে ভেবেছিলেন। অতঃপর আল্লাহ মৃত্যুর ফেরেশতাকে পাঠিয়ে তাঁর রূহ কবজ করান এবং একশ বছর পর্যন্ত মৃত অবস্থায় রেখে দেন।

একশ বছর পূর্ণ হলে আল্লাহ উযাইরের নিকট ফেরেশতা পাঠিয়ে দেন। ফেরেশতা এসে উযাইরের অন্তর ও চক্ষুদ্বয় জীবিত করলেন, যাতে কিভাবে আল্লাহ মৃতকে জীবিত করবেন তা স্বচক্ষে দেখেন ও অন্তর দিয়ে উপলব্ধি করেন। এরপর ফেরেশতা আল্লাহর নির্দেশে উযাইরের বিক্ষিপ্ত হাড়গুলো একত্রিত করে তাতে গোশত লাগালেন, চুল পশম যথাস্থানে সংযুক্ত করলেন এবং চামড়া দ্বারা সমস্ত শরীর আবৃত করলেন। সবশেষে তার মধ্যে রূহ প্ৰবেশ করালেন। তার দেহ এভাবে তৈরি হচ্ছে তা তিনি প্ৰত্যক্ষ করছিলেন এবং অন্তর দিয়ে আল্লাহর কুদরত উপলব্ধি করছিলেন। উযাইর উঠে বসলেন। ফেরেশতা জিজ্ঞেস করলেন, আপনি এ অবস্থায় কতদিন অবস্থান করলেন? তিনি বললেন, এক দিন অথবা এক দিনেরও কিছু কম। ফেরেশতা জানালেন, না বরং আপনি একশ বছর এভাবে অবস্থান করেছেন। আপনার খাদ্য সামগ্ৰী ও পানীয় বস্তুর প্রতি লক্ষ্য করুন। এখানে খাদ্য বলতে তাঁর শুকনা রুটি এবং পানীয় বলতে পেয়ালার মধ্যে আঙ্গুর নিংড়ানো রস বুঝানো হয়েছে। দেখা গেল, এ দুটির একটিও নষ্ট হয়নি।

রুটি ও রসের মত তাঁর আঙ্গুর এবং ডুমুরও টাটকা রয়েছে। এর কিছুই নষ্ট হয়নি। উযাইর ফেরেশতার মুখে একশ বছর অবস্থানের কথা শুনে এবং খাদ্য সামগ্রী অবিকৃত দেখে দ্বিধা-দ্বন্দ্বের মধ্যে পড়ে যান। তাই ফেরেশতা তাকে বললেন, আপনি আমার কথায় সন্দেহ করছেন? তাহলে আপনার গাধাটির প্রতি লক্ষ্য করুন। উযাইর লক্ষ্য করে দেখলেন যে, তার গাধাটি মরে পচে গলে প্ৰায় নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছে। হাড়গুলো পুরাতন হয়ে যত্রতত্র বিক্ষিপ্ত হয়ে পড়ে রয়েছে। অতঃপর ফেরেশতা হাড়গুলোকে আহ্বান করলেন। সঙ্গে সঙ্গে হাড়গুলো চতুর্দিক থেকে এসে একত্রিত হয়ে গেল এবং ফেরেশতা সেগুলো পরস্পরের সাথে সংযুক্ত করে দিলেন। উযাইর তা তাকিয়ে দেখছিলেন। তারপর ফেরেশতা উক্ত কংকালে রগ, শিরা-উপশিরা সংযোজন করলেন। গোশত দ্বারা আচ্ছাদিত করলেন এবং চামড়া ও পশম দ্বারা তা আবৃত করলেন। সবশেষে তার মধ্যে রূহ প্রবেশ করালেন। ফলে গাধাটি মাথা ও কান খাড়া করে দাঁড়াল এবং কিয়ামত আরম্ভ হয়ে গিয়েছে ভেবে চীৎকার করতে লাগল। যখন উযাইর (আঃ) এর নিকট এ বিষয়টি সুস্পষ্ট হয়ে গেল তখন তিনি বলে উঠলেন, আমি জানি যে, আল্লাহ সর্ববিষয়ে সর্বশক্তিমান। মৃতকে জীবিত করা সহ যে কোন কাজ করতে তিনি সম্পূর্ণ সক্ষম।

অতঃপর উযাইর (আঃ) উক্ত গাধার পিঠে আরোহণ করে নিজ এলাকায় চলে যান। কিন্তু সেখানে কোন লোকই তিনি চিনতে পারছেন না। আর তাকেও দেখে কেউ চিনতে পারছে না। নিজের বাড়ি-ঘরও তিনি সঠিকভাবে চিনে উঠতে পারছিলেন না। অবশেষে ধারনার বশে নিজের মনে করে এক বাড়িতে উঠলেন। সেখানে অন্ধ ও পঙ্গু এক বৃদ্ধাকে পেলেন। তার বয়স ছিল একশ বিশ বছর। এই বৃদ্ধা ছিল উযাইর পরিবারের দাসী। একশ বছর পূর্বে তিনি যখন বাড়ি থেকে বের হয়ে যান, তখন এই বৃদ্ধার বয়স ছিল বিশ বছর এবং উযাইরকে সে চিনত। বৃদ্ধ বয়সে উপনীত হলে সে অন্ধ ও পঙ্গু হয়ে যায়। উযাইর জিজ্ঞেস করলেনঃ হে বৃদ্ধা, এটা কি উযাইরের বাড়ি? বৃদ্ধা বললঃ হ্যাঁ, এটা উযাইরের বাড়ি। বৃদ্ধা মহিলাটি কেঁদে ফেলল এবং বলল, এতগুলো বছর কেটে গেল কেউ তার নামটি উচ্চারণও করে না, সবাই তাকে ভুলে গিয়েছে। উযাইর নিজের পরিচয় দিয়ে বললেন, আমিই সেই উযাইর। আল্লাহ আমাকে একশ বছর মৃত অবস্থায় রেখে পুনরায় জীবিত করেছেন। বৃদ্ধা বলল, কী আশ্চর্য। আমরাও তো তাকে একশ বছর পর্যন্ত পাচ্ছি না, সবাই তার নাম ভুলে গিয়েছে। কেউ তাকে স্মরণ করে না। তিনি বললেন, আমিই সেই উযাইর। বৃদ্ধা বলল, আপনি যদি সত্যিই উযাইর হন তাহলে উযাইরের দোয়া আল্লাহ কবুল করতেন। কোন রোগী বা বিপদগ্রস্তের জন্যে দোয়া করলে আল্লাহ তাকে নিরাময় করতেন এবং বিপদ থেকে মুক্তি দিতেন। সুতরাং আপনি আমার জন্য দোয়া করুন, আল্লাহ আমার দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়ে দিলে আপনাকে দেখব এবং আপনি উযাইর হলে আমি চিনব। তখন উযাইর দোয়া করলেন এবং বৃদ্ধার চোখে হাত বুলিয়ে দিলেন। এতে তার অন্ধত্ব দূর হয়ে গেল।

তারপর তিনি বৃদ্ধার হাত ধরে বললেন, আল্লাহর হুকুমে তুমি উঠে দাঁড়াও ৷ সাথে সাথে তার পঙ্গুত্ব বিদূরিত হল, সে উঠে দাঁড়ালো। তারপর উযাইরের দিকে তাকিয়ে দেখে বলে উঠল, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি আপনিই উযাইর। এরপর ঐ বৃদ্ধা বনী ইসরাঈলের মহল্লায় চলে গেল। সে দেখল তারা এক আসরে জমায়েত হয়েছে। সে আসরে উযাইরের এক বৃদ্ধ পুত্ৰও উপস্থিত ছিল, যার বয়স একশ আঠার বছর। পুত্রদের পুত্ররাও তথায় উপস্থিত ছিল। তারাও আজ প্রৌঢ়। বৃদ্ধা মহিলা এক পাশে দাড়িয়ে মজলিশের লোকদের ডেকে বলল, উযাইর তোমাদের মধ্যে আবার ফিরে এসেছেন। কিন্তু বৃদ্ধার এ কথা তারা হেসে উড়িয়ে দিল। তারা বলল, তুমি মিথ্যুক। বৃদ্ধা নিজের পরিচয় দিয়ে বলল, আমি অমুক, তোমাদের বাড়ির দাসী। উযাইর এসে আমার জন্যে আল্লাহর নিকট দোয়া করেছেন। তিনি আমার দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়ে দিয়েছেন এবং পঙ্গু পা সুস্থ করে দিয়েছেন। উযাইর বলেছেন, আল্লাহ তাঁকে একশ বছর মৃত অবস্থায় রেখে আবার জীবিত করে দিয়েছেন।

এ কথা শোনার পর লোকজন উঠে উযাইরের বাড়িতে গেল এবং তাকে ভাল করে দেখল। উযাইরের বৃদ্ধ পুত্র বলল, আমার পিতার দুই কাঁধের মাঝে একটি কাল তিল ছিল। সুতরাং সে কাঁধের কাপড় উঠিয়ে তিল দেখে তাকে চিনতে পারল এবং বলল, ইনিই আমার পিতা উযাইর। তখন বনী ইসরাঈলের লোকজন উযাইরকে বলল, আমরা শুনেছি আপনি ব্যতীত অন্য কোন লোকের তাওরাত কিতাব মুখস্থ ছিল না। এ দিকে বুখত নসর এসে লিখিত তাওরাতের সমস্ত কপি আগুনে জ্বালিয়ে দিয়েছে। একটি অংশও অবশিষ্ট নেই। সুতরাং আপনি আমাদের জন্যে একখানা তাওরাত লিখে দিন। বুখত নসরের আক্রমণকালে উযাইরের পিতা সারূখা তাওরাতের একটি কপি মাটির নিচে পুঁতে রেখেছিলেন। কিন্তু সেই স্থানটি কোথায় উযাইর ব্যতীত আর কেউ তা জানত না। সুতরাং তিনি উপস্থিত লোকদেরকে সাথে নিয়ে সেই স্থানে গেলেন এবং মাটি খুঁড়ে তাওরাতের কপি বের করলেন। কিন্তু এতদিনে তাওরাতের পাতাগুলো নষ্ট হয়ে সমস্ত লেখা মুছে গিয়েছে। এরপর তিনি একটি বৃক্ষের নিচে গিয়ে বসলেন, বনী ইসরাঈলের লোকজনও তাঁর পাশে গিয়ে ঘিরে বসল। কিছুক্ষণের মধ্যে আকাশ থেকে দুটি নক্ষত্র এসে তার পেটের মধ্যে প্রবেশ করল। এতে গোটা তাওরাত কিতাব তাঁর স্মৃতিতে ভেসে উঠলো। তখন বনী ইসরাঈলের জন্যে তিনি নতুনভাবে তাওরাত লিখে দিলেন।

এ সকল কারণে অর্থাৎ নক্ষত্রদ্বয়ের অবতরণ, তাওরাত কিতাব নতুনভাবে লিখন ও বনী ইসরাঈলের নেতৃত্ব গ্রহণের কারণে ইহুদীদের একদল পথভ্রষ্ট লোক উযাইরকে “আল্লাহর পুত্র” হিসেবে আখ্যায়িত করে।

আল্লাহ তায়ালা হযরত উযাইর (আঃ)-কে মানব জাতির জন্যে নিদর্শন বানাবার উদ্দেশ্যে এরূপ করেছিলেন। উযাইর (আঃ) যখন বনী ইসরাঈলের নিকট ফিরে এসেছিলেন তখন তাঁর পুত্ৰগণ সবাই ছিল বৃদ্ধ, অথচ তিনি যুবক। কেননা যখন তাঁর মৃত্যু হয়েছিল তখন তাঁর বয়স ছিল চল্লিশ বছর। একশ বছর পর আল্লাহ যখন তাঁকে জীবিত করলেন তখন (প্রথম) মৃত্যুকালের যৌবন অবস্থার উপরেই জীবিত করেছিলেন। তাই তাঁর মাথার চুল কালই ছিল, কিন্তু এর পূর্বেই তাঁর পুত্র ও পৌত্রের চুল পেকে সাদা হয়ে গিয়েছিল। তিনি ছিলেন যুবক অথচ তাঁর পুত্র ছিলেন বৃদ্ধ, লাঠির উপর ভর দিয়ে চলাফেরা করতেন। পিতার বয়স চল্লিশ বছর আর পুত্রের বয়স নব্বই বছর অতিক্রম করেছে। আল্লাহু আকবার। আল্লাহ সকল বিষয়ের উপর ক্ষমতাবান।

সূত্রঃ ................

“আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া” কিতাব থেকে সংগৃহীত ও সংক্ষেপিত।

Problem with your custom signature edit

You have a custom signature set in your account preferences. A change to Wikipedia's software has made your current custom signature incompatible with the software.

The problem: Your preferences are set to interpret your custom signature as wikitext. However, your current custom signature does not contain any wikitext.

The solutions: You can reset your signature to the default, or you can fix your signature.

Solution 1: Reset your signature to the default:
  1. Find the signature section in the first tab of Special:Preferences.
  2. Uncheck the box (☑︎→☐) that says "Treat the above as wiki markup."
  3. Remove anything in the Signature: text box. (It might already be empty.)
  4. Click the blue "Save" button at the bottom of the page. (The red "Restore all default settings" button will reset all of your preference settings, not just the signature.)
Solution 2: Fix your custom signature:
  1. Find the signature section in the first tab of Special:Preferences.
  2. Uncheck the box (☑︎→☐) that says "Treat the above as wiki markup."
  3. Click the blue "Save" button at the bottom of the page.

More information about custom signatures is available at Wikipedia:Signatures#Customizing how everyone sees your signature. If you have followed these instructions and still want help, please leave a message at Wikipedia talk:Signatures. 19:04, 3 September 2020 (UTC)