মনিরামপুর উপজেলার ইতিহাস এবং ভৌগলিক অবস্থান মনিরামপুর উপজেলার ইতিহাস এবং ভৌগলিক অবস্থান

সংক্ষিপ্ত ইতিহাস :

এককালের স্রোতাস্বিনী, আজকের মরা নদী হরিহরের তীরে মণিরামপুর উপজেলা। জনশ্রুতি আছে রাজা সীতারাম রায়ের উকিল মুণিরাম রায়ের নাম ধরে জনপদের নাম হয়েছে মণিরামপুর। চাঁচড়া রাজবাড়ীর জনৈক মহিলা এখানে একটি মস্তবড় পুকুর খনন করেন। আজও তা কালেmonirampur_mapর স্বাক্ষী হয়ে আছে। উনবিংশ শতকের প্রথম দশকে পুকুরটি খনন করা হয়। ত্রিমোহনী সংযোগ সড়কে রাজারা রাজগঞ্জ-মনিরামপুর ৯ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণ করেন। ১৭৮৫ সাল হতে মনিরামপুর খ্যাত। নির্বাচিত প্রথম চেয়ারম্যান জনাব মো: লুৎফার রহমান এবং প্রথম নির্বাহী অফিসার জনাব মো: এস, এম, মিজানুর রহমান। জেলা সদর হতে মনিরামপুরের দুরত্ব ২০ কিলোমিটার।


ভৌগোলিক অবস্থান :

৪৪৪.৭২ বর্গ কিলোমিটার আয়তন বিশিষ্ট মনিরামপুর উপজেলা উত্তরে যশোর সদর, দক্ষিণে কলারোয়া, কেশবপুর ও ডুমুরিয়া, পূর্বে অভয়নগর এবং পশ্চিমে ঝিকরগাছা উপজেলা নিয়ে বেষ্টিত।


শহরের আয়তন ও জনসংখ্যা :

মনিরামপুর শহর ৯টি ওয়ার্ড ও ১৪টি মহল্লা নিয়ে গঠিত। শহরের আয়তন ১১.৪৮ বর্গ কি: মি:। শহরের জনসংখ্যা প্রায় ২০ হাজার। এর মধ্যে পুরুষ ৫২.৩৬% ও মহিলা ৪৭.৬৪%। জনসংখ্যার ঘনত্ব প্রতি বর্গ কিলোমিটারে প্রায় ১৭০০ জন। শহরের অধিবাসীদের মধ্যে সাক্ষরতার হার ৪৩.৩%।


প্রশাসন :

১৫ এপ্রিল ১৯৮৩ সালে মনিরামপুর থানাকে উপজেলায় উন্নীত করা হয়। ১টি পৌরসভা, ৯টি ওয়ার্ড, ১৭টি ইউনিয়ন পরিষদ, ২৪৬টি মৌজা এবং ২৪৯ টি গ্রাম নিয়ে এটি গঠিত এই উপজেলা।


নদ-নদী ও বিল-বাওড় :

প্রধান নদ-নদীর মধ্যে রয়েছে কপোতাক্ষ ও হার্টহার। ঝিয়াদাহা, কাদারিয়া, মনহরপুর, থাসিয়াটি বিল ও খাজুরা বাওড় উল্লেখযোগ্য।


স্থাপত্য, ঐতিহ্য ও প্রত্নতাত্তিক নিদর্শন :

জয়পুর গ্রামের নীলুকুঠি।


ঐতিহাসিক ঘটনা :

মুক্তিযুদ্ধের সময় মনোহর গ্রামে পাক সেনাবাহিনী ও মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে মুখোমুখি যুদ্ধ হয়। এতে পাকিস্তানী বাহিনী ২৩ জন নিরীহ ও নিরাপরাধ গ্রামবাসীকে হত্যা করে।


মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন :

উপজেলায় মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন হিসেবে রয়েছে ‘শহীদ আকরাম সড়ক’।


জনসংখ্যা :

উপজেলার মোট জনসংখ্যা প্রায় ৩ লক্ষ ৩০ হাজার। এর মধ্যে পুরুষ ৫০.১%, মহিলা ৪৯.৯%, মুসলমান ৭৯.২%, হিন্দু ২০.৬২% এবং অন্যান্য ৫.১৮%।


সাক্ষরতা :

গড় সাক্ষরতা ২৮.৯%। এর মধ্যে পুরুষ ৩৭.২% এবং মহিলা ২০.৬%।


শিক্ষা প্রতিষ্ঠান :

কলেজের সংখ্যা ১১টি, উচ্চ বিদ্যালয়ের সংখ্যা ৭৭টি, নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যায়ের সংখ্যা ৩৭টি, মাদ্রাসার সংখ্যা ১৬৩টি, সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ১২০টি এবং বেসরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ১৪৬ টি।


ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান :

মসজিদের সংখ্যা ৫২০টি, মন্দিরের সংখ্যা ৫৮টি এবং গীর্জার সংখ্যা ০৬টি।


আবাদযোগ্য জমি :

মোট আবাদি জমির পরিমাণ ১,০৯,৮৯৪ একর।


প্রধান পেশা :

কৃষি ৪৫.৬%, কৃষি শ্রমিক ২৮.৩৬%, পরিবহন ২.৪৪%, দিন মজুর ১.৯৯%, ব্যবসা বাণিজ্য ৯.৫১%, চাকুরী ৩.৯৪%, শিল্প ২% এবং অন্যান্য ৬.১৬%।


প্রধান ফসল :

ধান, গম, পাট, আলু, সরিষা ও তরিতরকারী। বিলুপ্ত অথবা প্রায় বিলুপ্ত ফসলের মধ্যে রয়েছে মসীনা, নীল, এবং অরহর।


প্রধান ফল :

আম, কাঁঠাল, পেঁপে ও কলা।


যোগাযোগ সুবিধাদি :

পাকা রাস্তা ৪৪ কি: মি:, আধা পাকা ৩২ কি:মি: এবং কাঁচা রাস্তা৭৮৬ কি: মি:। ঐতিহ্যগত পরিবহনের মধ্যে রয়েছে পাল্কী ও গরুর গাড়ী। এ ধরনের পরিবহন হয় বিলুপ্ত অথবা প্রায় বিলুপ্ত।


শিল্প প্রতিষ্ঠান :

চাউল কল, আটা কল ও বরফ কল।


কুঠির শিল্প :

তাঁত, স্বর্ণকার, কামার, কুম্ভকার, মাটির কাজ, দরজী ও ওয়েল্ডিং।


হাট-বাজার ও মেলা :

মোট হাট বাজারের সংখ্যা ৬০টি। এগুলোর মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে নেহালপুর, মনিরামপুর, ঢাকুরিয়া এবং চীনেটোলা।


প্রধান রপ্তানী :

খেজুরের গুড়, পাট ও কলা।


এনজিও তৎপরতা :

তৎপরতা চালাচ্ছে এমন গুরুত্বপূর্ণ এনজিওগুলো হচ্ছে ব্র্যাক, আশা ও গ্রামীণ ব্যাংক।


স্বাস্থ্য কেন্দ্র :

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ১টি এবং স্যাটেলাইট ক্লিনিক ২টি।


চিরকুটবিডি