তাবলীগ ও আমরা

প্রত্যেক মুমিন নারী ও পুরুষের দায়িত্ব ভালো কাজের আদেশ এবং খারাপ কাজে নিষেধ করা। আল্লাহ তায়ালার বাণী

وَلْتَكُن مِّنكُمْ أُمَّةٌ يَدْعُونَ إِلَى الْخَيْرِ وَيَأْمُرُونَ بِالْمَعْرُوفِ وَيَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنكَرِ ۚ وَأُولٰٓئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُونَ

আর যেন তোমাদের মধ্য থেকে এমন একটি দল হয়, যারা কল্যাণের প্রতি আহবান করবে, ভাল কাজের আদেশ দেবে এবং মন্দ কাজ থেকে নিষেধ করবে। আর তারাই সফলকাম। (সূরা আলে ইমরান : ১০৪)

তাবলীগের ভাইরা তাই করেন। কিন্তু দুঃখজনক ভাবে তারা দাওয়াতে তাবলীগকে ফাযায়েলের মধ্যে সীমাবদ্ধ করে রেখেছেন। অনেক তাবলীগের ভাই আছেন যারা তাবলীগ এর অর্থটাও জানে না। তাদের ধারণা তাবলীগ মানে ফাযায়েল পড়া, তিন দিনে যাওয়া, চিল্লায় যাওয়া ইত্যাদি। আর তারা ভাবেন যে, যারা নামায পড়েন তারা ভালো বাকিরা খারাপ। তাবলীগ মানে হলো পৌছিয়ে দেওয়া। রাসূল (সাঃ) বলছেন, বুখারী শরীফের হাদিস।

"بلغوا عني ولو آية" অর্থ : তোমরা আমার পক্ষ হতে একটি আয়াত হলেও পৌছিয়ে দাও। ( সাহীহ বুখারী শরীফ : ৩৪৬১)

এর থেকে স্পষ্ট বুঝা যায়, আমাদের দায়িত্ব দাওয়াত দেওয়া, দ্বীনের পথে আহবান করা। ভালো খারাপ মাপা নই। ভালো খারাপ আল্লাহ তায়ালা যাচাই করবেন। আপনার ধারণা মতে যদি তারা খারাপ হয়ে থাকেন। তাহলে আপনার দায়িত্ব তার কাছে বার বার যাওয়া, তাকে দ্বীনের কথা বুঝানো এবং সুন্দর কথা দিয়ে সুন্দর আচরণ দিয়ে তাকে দ্বীনের পথে আনা। সূরা নহলে আল্লাহ তায়ালা বলছেন

ادْعُ إِلٰى سَبِيلِ رَبِّكَ بِالْحِكْمَةِ وَالْمَوْعِظَةِ الْحَسَنَةِ ۖ وَجٰدِلْهُم بِالَّتِى هِىَ أَحْسَنُ ۚ إِنَّ رَبَّكَ هُوَ أَعْلَمُ بِمَن ضَلَّ عَن سَبِيلِهِۦ ۖ وَهُوَ أَعْلَمُ بِالْمُهْتَدِينَ

অর্থ: তুমি তোমরা রবের পথে হিকমত ও সুন্দর উপদেশের মাধ্যমে আহবান কর এবং সুন্দরতম পন্থায় তাদের সাথে বিতর্ক কর। নিশ্চয় একমাত্র তোমার রবই জানেন কে তার পথ থেকে ভ্রষ্ট হয়েছে এবং হিদায়াতপ্রাপ্তদের তিনি খুব ভাল করেই জানেন। (সূরা নহল : ১২৫) যারা সৎ পথে নাই আপনি তাদের এড়িয়ে কাকে দাওয়াত দিবেন। যদি তাদেরই আপনি এড়িয়ে যাচ্ছেন তাহলে আপনার দাওয়াত তো তাদের দ্বারে যাবে না। তাদেরকে এড়িয়ে আপনি আর কাকে দাওয়াত দিবেন।

َِأْمُرُونَ بِالْمَعْرُوفِ وَيَنْهَوْ عَنِ الْمُنكَرِ মানে তো এটায়, সৎ কাজের আদেশ অসৎ কাজে নিষেধ করা। কেউ নামায কালাম পড়ছেনা বলে তাকে এড়িয়ে গেলে আয়াতের উপর আমল করা তো হচ্ছে না। বরঞ্চ আয়াতের বিপরীত হচ্ছে।

আগে আমাদের জানতে হবে তাবলীগ মানে কি? আমি কেন তাবলীগ করব? তাবলীগ কি শুধু তিন দিন বা চিল্লায় যেয়ে পালন করতে হয়? শুধু কি ফাযায়েল ই তাবলীগের সিলেবাস? এই সব প্রশ্নের উত্তর আমাকে আগে জানতে হবে। যারা তাবলীগ করেন তাদের বেশির ভাগ জানেও না তাবলীগ আসলে কি। তাদের মতে তাবলীগ মানে তিন দিনে যাওয়া। চিল্লায় যাওয়া ফাযায়েল পড়া এই সব। তবে এইসব আসলে অনেক ভালো কাজ। একজন মুমিনের ঈমান আরো বাড়িয়ে দেয়। তবে তাকে যদি তাবলীগ মনে করেন তাহলে গোমরাহীর মধ্যে আছেন।

তাবলীগ করার জন্য আপনাকে তিন দিনে কিংবা চিল্লায় যেতে হবে না। আপনি আপনার অফিসে কিংবা বাসায় ও তাবলীগ করতে পারেন। যেমন আপনার অফিসের সবাইকে নামাযের আহবান জানালেন, আপনার বাসার আশেপাশের সবাই ডেকে নিয়ে নামাযে গেলেন। এটাও তাবলীগ। তাবলীগ প্রত্যেক মুমিনের উপর ফরয। আল্লাহ তায়ালা বলছেন, "তারাই উত্তম বক্তা যার মানুষকে আল্লাহর পথে ডাকে, নেক আমল করে এবং বলে আমি একজন মুসলিম।

وَمَنْ أَحْسَنُ قَوْلًا مِّمَّن دَعَآ إِلَى اللَّهِ وَعَمِلَ صٰلِحًا وَقَالَ إِنَّنِى مِنَ الْمُسْلِمِينَ

অর্থ: আর তার চেয়ে কার কথা উত্তম, যে আল্লাহর দিকে দাওয়াত দেয়, সৎকর্ম করে এবং বলে, অবশ্যই আমি মুসলিমদের অন্তর্ভুক্ত’ (সূরা ফুসসিলাত : ৩৩)

আল্লাহ তায়ালা অন্য আয়াতে বলছেন আমাদেরকে উত্তম জাতী হিসাবে সৃষ্টি করেছেন। আমাদের কাজ হচ্ছে সৎ কাজে আদেশ করা অন্যায় অবিচার থেকে বিরত রাখা। সূরা আলে ইমরানে আল্লাহ তায়ালা বলছেন

كُنتُمْ خَيْرَ أُمَّةٍ أُخْرِجَتْ لِلنَّاسِ تَأْمُرُونَ بِالْمَعْرُوفِ وَتَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنكَرِ وَتُؤْمِنُونَ بِاللَّهِ ۗ

অর্থ: তোমরাই হলে সর্বোত্তম উম্মত,যাদেরকে মানুষের জন্য বের করা হয়েছে। তোমরা ভাল কাজের আদেশ দেবে এবং মন্দ কাজ থেকে বারণ করবে, আর আল্লাহর প্রতি ঈমান আনবে। (সূরা আলে ইমরান : ১১০)

একজন মুমিনের প্রথম ও প্রধান কাজ হচ্ছে أْمُرُونَ بِالْمَعْرُوفِ وَيَنْهَوْ عَنِ الْمُنكَرِ আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে যেন সঠিক ভাবে বুঝার তাওফিক এনায়েত করেন।